কৃষিতে বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫ সময়ঃ ৯:০৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:৫৫ অপরাহ্ণ

Womens

ফসলের মাঠ থেকে গবেষণাগার, সর্বত্রই রয়েছে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ। নারীর হাত ধরেই কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন হয়েছে। বর্তমানে সকল পেশার পাশাপাশি নারীদের কৃষি পেশায় অংশগ্রহণ দেখার মত।

পশু প্রজনন, নতুন জাত উদ্ভাবন ও উৎপাদন বৃদ্ধি, মাছের জাত উন্নয়ন এবং কৃষি বিষয়ক উদ্ভাবনে তারা ঈষার্ণীয় সফলতা লাভ করছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এক দশকে যেখানে কৃষিক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণ কমেছে, সেখানে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। মাঠভিত্তিক কৃষিকাজ ও গৃহভিত্তিক কৃষিকাজ এ দুটি পর্যায়েই নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১২ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন ৬৮ দশমিক এক শতাংশ নারী। তারা কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়ার তিনটি পর্যায় যথা- প্রাক বপন প্রক্রিয়া, বীজ বপন ও ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং ফসল-উত্তর প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকেন। তাছাড়া ফসল উত্তরণ প্রক্রিয়ায় মাড়াই, বাছাই শুকানো ও আহারযোগ্য করে তোলার কাজের বেশিরভাগ দায়িত্বই পালন করেন নারী।

২০০৮ সালে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কৃষিখাতে নিয়োজিত পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান শতকরা ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ বেশি। তবুও কৃষিকাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের তেমন কোন মূল্যায়ন নেই।

womens

বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে কৃষি খাতে অংশগ্রহণকারী নারী শ্রমিকের কোনো সংখ্যা তথ্য নেই। কৃষিকাজে সম্পৃক্ত নারী কৃষক মজুরি প্রাপ্তিতে বৈষম্যেরও শিকার হন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের নামমাত্র মজুরি দেয়া হয়। ফলে কৃষিকাজে পুরুষের সমান অংশগ্রহণ করেও নারীর পরিচয় থাকছে কেবল গৃহিণী হিসেবে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিগত এক দশকে এক কোটি ২০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি, বন ও মৎস্য খাতেই যুক্ত হয়েছে ২০ লাখ শ্রমিক। কৃষিতে নতুন কর্মসংস্থানের ইঙ্গিত দিলেও দেশের কৃষি খাতের গতিশীলতা, কৃষিতে ন্যায্য মজুরি অথবা কৃষি শ্রমিকের বাজারে প্রবেশাধিকার কিছুই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। শ্রমশক্তির সংখ্যা অনুযায়ী ২৯ শতাংশ নারী অবৈতনিক পারিবারিক কাজে নিয়োজিত থাকার পরও শ্রমশক্তির অংশ হিসেবে অদৃশ্যই থেকে যাচ্ছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৮১ শতাংশ নারী গৃহসহ কৃষিকর্মে সরাসরি অবদান রাখছেন। কিন্তু তাদের শ্রমকে শ্রমশক্তি হিসেবে গণ্য করা হয় না। কারণ তাদের এ কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না।
কৃষিতে নারীর অবদান বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. রমিজ উদ্দিন বলেন, পুকুরে মাছ চাষ, হাঁস-মুরগিসহ কবুতর প্রতিপালন, গরু-ছাগল ও মহিষ দেখাশোনায় নারীরা শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশের চা উৎপাদন কথা বললে বলতেই হবে যে, চা উৎপাদনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী শ্রমিকের অবদান গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণের ফলে একদিকে যেমন দেশের খাদ্যনিরাপত্তা বাড়ছে অন্যদিকে মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই কৃষিখাতকে গতিশীল করতে হলে সঠিক বিবেচনার ভিত্তিতে কৃষাণি নারীদেরও ‘কৃষক কার্ড’ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দিতে হবে তাদেরও সরকারি কৃষি প্রণোদনা। তা হলেই সামনের দিনে নারীরা কৃষিতে নতুন বিপ্লব ঘটাতে আগ্রহী হয়ে ওঠবেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/ডিএইচ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G